
সংরক্ষিত আসন বিলুপ্তির সুপারিশের প্রতিবাদ মহিলা পরিষদের
- আপলোড সময় : ১৬-০৭-২০২৫ ০১:০৬:৪২ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৬-০৭-২০২৫ ০১:০৬:৪২ অপরাহ্ন


জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন বিলুপ্তির জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। গতকাল মঙ্গলবার পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম এবং সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানুর সই করা এক বিবৃতিতে এই প্রতিবাদ জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গভীর বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, ১৪ জুলাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ধারাবাহিক সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সংসদে নারী আসন বিষয়ে আলোচনায় সংবিধানে উল্লেখিত জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন বিলুপ্তির সুপারিশ করা হয়, যা ঐকমত্য কমিশনের একান্তই নিজস্ব প্রস্তাব। সংরক্ষিত নারী আসন বিলুপ্তির এই সুপারিশ আমাদের সংবিধানের মূল নীতির পরিপন্থি এবং জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি, জাতিসংঘ ঘোষিত সিডও সনদ এবং এসডিজির সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। মহিলা পরিষদ জানায়, কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই নারী আন্দোলনের দীর্ঘ পাঁচ দশকের সুপারিশ এবং বর্তমান অর্ন্তবতী সরকারের নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন, নির্বাচন বিষয়ক সংস্কার কমিশন, সংবিধান বিষয়ক সংস্কার কমিশন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সুপারিশ উপেক্ষা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন বিলুপ্তির সুপারিশের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসব্রিফিংয়ে দেওয়া কমিশন চেয়ারম্যানের বক্তব্যে আমরা দেখলাম, অধিকাংশ রাজনৈতিক দলগুলো সংসদে ১০০টি সংরক্ষিত নারী আসনের পক্ষে একমত হয়েছেন যদিও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা হয়নি, আলোচনা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের নারী সমাজ দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক অগ্রগতিতে অংশগ্রহণ করে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত জাতীয় সংসদে দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী সমাজের যথাযথ এবং কার্যকর প্রতিনিধিত্ব নাই। যার কারণ হিসাবে বলা যায় নারীর প্রকৃত রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী নারীকে নেতৃত্বে আনার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যকরী পদক্ষেপে ধীরগতি এবং নির্বাচনে নারীকে প্রার্থী করার ক্ষেত্রে পরিকল্পিত উদ্যোগহীনতা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ মনে করে, জাতীয় সংসদে কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ নির্বাচিত নারী সদস্যের উপস্থিতি নারী সমাজের স্বার্থ ও মানবাধিকার রক্ষায় ভূমিকা রাখবে এবং জনগণের কাছে তাদের দায়বদ্ধতা তৈরি করবে। একথা আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, কোনো সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ নারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারলে নারীর ক্ষমতায়নের পথ প্রশস্ত হয়। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ; যা কিনা আমাদের দেশের জন্য এখনও প্রাসঙ্গিক। এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের নারী আন্দোলন অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছে, নারীর চলমান অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে এবং লিঙ্গীয় সমতা ও নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান; যা একটি বৈষম্যহীন, সমতা ভিত্তিক সমাজ গঠনের অন্তরায় এবং যেখানে প্রতিনিয়ত নারী বিরোধী এবং গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি সক্রিয় রয়েছে। আমরা মনে করি, এইরকম একটি অবস্থায় নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নবিরোধী একটি সুপারিশ দায়িত্বহীনতার পরিচয়, যা নারীবিরোধী শক্তিকে প্রকারান্তরে উৎসাহিত করবে। মহিলা পরিষদ জানায়, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে নারীর রাজনৈতিক ক্ষতায়নের জন্য ধারাবাহিকভাবে যে আন্দোলন করে আসছে সেখানে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি এবং সেখানে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। যাতে করে সংরক্ষিত নারী আসনের প্রতিনিধিরা মনোনয়নের মাধ্যমে নয়, জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে সমান অধিকার, মর্যাদা এবং দায়িত্বের সঙ্গে ফলপ্রসূ এবং কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সব রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে নারী রাজনৈতিক কর্মীদের সোচ্চার হওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। এক্ষেত্রে মহিলা পরিষদের সুস্পষ্ট দাবিগুলো হচ্ছে, জাতীয় সংসদের সাধারণ আসনে নারী-পুরুষ উভয়ই নির্বাচন করতে পারবে। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন থাকবে। সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা ন্যূনতম এক তৃতীয়াংশে উন্নীত করতে হবে। সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নের প্রথা বাতিল করতে হবে। একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকা থেকে সংরক্ষিত নারী আসনে জনগণের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং এই ব্যবস্থাটি ২-৩ টার্মের জন্য থাকবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ